NEWS HUNGAMA
কলকাতা, জুন 28, 2022, খবর News Hungama
রাজ্যে একের পর এক ঘটছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা।
- গত রবিবার বৃষ্টির জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালো 12 বছর বয়সী এক স্কুল পড়ুয়া, নীতিশ যাদব। ঘটনাটি ঘটেছে হরিদেবপুরে। জানা গিয়েছে, 12 বছর বয়সী নীতিশ, রবিবার সন্ধ্যা 6.52 নাগাদ জমা জল পেরিয়েই তার গৃহশিক্ষিকার বাড়ি যাচ্ছিল প্রসাদ দিতে। জমা জলের মধ্যে দিয়ে হাঁটার সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে সামনের ইলেকট্রিক পোলে হাত রাখে নীতিশ এবং ছিটকে পড়ে যায়।
স্থানীয়দের মতে, ঘটনাটি সন্ধ্যায় ঘটলেও আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে এবং এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে কিছুটা সময় লেগেছিল। এক প্রতিবেশী বলেন, “প্রায় এক ঘণ্টা পরে, ছেলেটিকে বের করে আনা হয়েছিল।”
“ছেলেটি তার বাড়ি থেকে কয়েক মিটার দূরে 34/বি হাফিজ মোঃ ইসহাক রোডে অবস্থিত একটি জলাবদ্ধ ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল। তাকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল,” বলেছেন ডিসিপি (বেহালা) সৌম্য রায়৷
পরে তাকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
- গত 10ই মে, মঙ্গলবারে সকাল 10টা নাগাদ প্রবল বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান হাওড়ার ইছাপুরের একটি 23 বছর বয়সী mechanical engineer এবং তার 58 বছর বয়সী বাবা। দুর্ঘটনার সময় দুজনেই তাদের কারখানার চত্বরে ছিলেন, যা তাদের বাড়ির পাশে।
পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের কারখানাটি জলের নিচে ছিল। শৈলেন হাজরা একটি মেশিন চালু করার চেষ্টা করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন। শৈলেনের কান্না শুনে আতঙ্কিত হয়ে পাশে থাকা তার ছেলে স্বপ্নিল তার বাবাকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং সে তার বাবাকে স্পর্শ করার সাথে সাথে সেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল। স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকায় প্রায়ই জলাবদ্ধতা থাকে বলে দাবি স্থানীয়দের। হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, স্থানীয়রা প্লাস্টিকের বোতল ড্রেনে ফেলে দেয়, যার জন্য এইচএমসি সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
- গত বছর মহাষ্টমীতে চন্দননগরের কাটাঁপুকুর এলাকায় শাওলি বটতলা দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় লাউড স্পিকার লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন 61 বছরের শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়।
- উত্তর-পূর্ব কলকাতার দমদমের জলাবদ্ধ রাস্তা দিয়ে টিউশন ক্লাস থেকে ফিরে আসা 12 বছর বয়সী দুটি মেয়ে, অনুষ্কা নন্দী ও স্নেহা বনিক গত 22শে সেপ্টেম্বর 2021, বুধবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাক্রমে একটি লোহার পোস্টের সংস্পর্শে আসার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান একটি চার চাকা গাড়ি যাচ্ছিলো এবং তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে ফিরছিল। গাড়িটি যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিতে মেয়েরা একপাশে সরে গিয়েছিল যখন তাদের একজন সমর্থনের জন্য লোহার পোস্টটি ধরেছিল।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক বাসিন্দা বলেন যে তাদের মধ্যে একজন লোহার পোষ্ট স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় এবং তাকে সাহায্য করতে গিয়ে অন্য মেয়টিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।
দুজনকেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
- বৃষ্টির জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় আরো এক মৃত্যুর ঘটনা উঠে এসেছিলো গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। আগারপাড়ার বছর 65-এর দীপক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি গত 22-এ সেপ্টেম্বর রাত 10.30 নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তিনি লখ্য করেননি তাঁর বাড়ির সামনেই জমা জলে পড়ে ছিলো কারেন্টের ছেঁড়া তার। তারে পা রাখা মাত্রই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এই প্রৌঢ়ের।
- গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজ্যে 14 জনের মৃত্যু ঘটেছিল, যাদের মধ্যে 4 জন ছিল পড়ুয়া। এবং ২৪ ঘন্টায় মালদহের তিন প্রান্তে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।ঘটনাগুলি ঘটেছে মোথাবাড়ি, হবিবপুর ও গাজোল থানা এলাকায়।
- গত বছর জুন মাসে, পাটুলি এবং হরিদেবপুরে পৃথক দুর্ঘটনায় 18 বছর বয়সী এক যুবক এবং 36 বছর বয়সী একজন বাইকার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন।
- 2020 তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে শহরে ১৯ জন মারা গিয়েছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।
- 2016 সালে, একটি 14-বছর-বয়সী ছাত্র ভবানীপুরের একটি রাস্তায় জলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় ল্যাম্পপোস্ট স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল।
- রাস্তার ধারে ঝুলে থাকা ল্যাম্পপোস্ট বা ছিঁড়ে যাওয়া তারের সংস্পর্শে এসে জলাবদ্ধ ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় পথচারীরা মারা যাচ্ছে।
- শিক্ষিকার বাড়ি যাওয়ার পথে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিলো হরিদেবপুরে, ঠিক তার কয়েকশো মিটার দূরেই রয়েছে মরণফাঁদ। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে ই এম বাইপাস, খোলা তারের বিপদ সর্বত্র। স্থানীয়রা জানিয়েছেন তারগুলির ঠিকঠাক মেনটেন করা হয়না। মেয়রের নির্দেশ অনুযায়ী কোনো বাতিস্তম্ভে খোলা তার রাখা যাবেনা। এই নির্দেশিকার পরেও কপালকাতার রিচি রোডে কেনো দেখা যাবে এমন চিত্র? কেনো খোলা আছে ত্রিফলার জয়েন্ট বক্স? এই অবস্থা বাসিন্দাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ হতে পারে মরণফাঁদের শিকার। কে নেবে তার দায়? গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যে বিপদগুলি ঘটছে তার পরেও কি হুঁশ ফেরেনি? প্রতিবার বৃষ্টির পর কলকাতায় সবচেয়ে বড় ঘাতক হয়ে উঠেছে বৈদ্যুতিক আঘাত। একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে রাজ্য। কবে সচেতন হবে রাজ্য? আর কত? সরকারের উচিত শীঘ্র ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করা, বৈদ্যুতিক তারগুলি মেরামত করা, কোথাও যেন ছেঁড়া তার না পড়ে থাকে তা লক্ষ্য রাখা। যত শীঘ্র সম্ভম নতুন উদ্যোগ নেওয়া হোক, প্রচার শুরু করা হোক। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হোক। শপথ নেওয়া হোক বিদ্যুৎস্পৃষ্টের কারণে আর কোনো জীবন যেন হারাতে না হয়।
এই নতুন শপথের পাশে আমরা সবাই আছি।